ঢাকা ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টা করে নিজ জমি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে!

পাবনা সদরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নে নিজ নামের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জমি ছেড়ে না দেওয়ায় কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি। রোববার (৬ এপ্রিল) রাতে ইউনিয়নের শ্রীকোল বাজারে তাদেরকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় পাবনা কোর্টে সোমবার (১৩ এপ্রিল) একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে আব্দুল ওহাব প্রামাণিক পরিবার।

ভুক্তভোগীরা হলেন- শ্রীকোল গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে  মোঃ বকুল প্রামানিক (৩৫)  ফরিদ প্রামাণিক (২৫)। এদের মধ্যে বকুল প্রামাণিককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- শ্রীকোল গ্রামের আলতাব প্রামাণিকের ছেলে বায়েজিদ হাসান আবেদ, খয়বার প্রামানিকের ছেলে ওবায়দুল হাসান, কেরু প্রামাণিকের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, আলতাবের ছেলে কোরবান আলী, কাদের মন্ডলের ছেলে নাজমুল হোসেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এসব দূর্দান্ত, দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় বাদীকে ভোগ দখলে রাখা জমির বসতবাড়ী হতে বেদখল করার নানা পাঁয়তারা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাদী ও বাদীর ছেলে মোঃ বকুল প্রামাণিক এবং ফরিদ প্রামাণিক গত ৬ এপ্রিল রোববার  সন্ধা ৭ টার দিকে শ্রীকোল বাজারে থেকে বাড়িতে আসার পথে আসামিরা বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, জিআই পাইপ, চাপাতি, লোহার রড, হাতুরী সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।  স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এছাড়াও সেদিন সকালে তাদের বাড়িতে এসে এই চক্রটি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আনুমানিক ১,২০,০০০/- (এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকার ক্ষতি করে ফিরে যাওয়ার সময় হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, ওই দাগে মোট ৬১ শতাংশ জমি রয়েছে। দাগ নম্বর আরএস দাগ ৩২৩৫। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ এক নম্বর খতিয়ানভূক্ত খাসে একই দাগভূক্ত ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মালিকানাধীন এবং দুইটা আলাদা খতিয়ানভূক্ত। মালিকানাধীন সম্পত্তির তিনটি রেকর্ড ডিএস, এসএ, আরএস তিনটা রেকর্ডিই মালিকানাধীন। ৭০ বছরের বসতি। খাজনা পরিশোধ। আর এসে রেকর্ডে শ্রেণিতে বাড়ি উল্লেখ করা আছে। এবং খাস সম্পত্তি ৩১ এর প্রায় ২০/২২ শতাংশের উপর ৫ টি ভূমিহীন পরিবার ৬০/৬৫ বছর ধরে বসবাস করে। তার পিছনে খাসের ১০ শতাংশ জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পুকুর রয়েছে। 

১৯৫৭ সালে চরতারাপুরের খোদাবক্স নামের ব্যক্তির থেকে পশ্চিম দিকে উল্লেখ করে ২৬ শতাংশ জমি কেনেন সকির উদ্দিন ও কফিল উদ্দিন। আর ৪ শতাংশ কেনেন শান্টু দফাদার। বাকি সরকারি সম্পত্তির উপর ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোসলেম শেখ, সবুজ মোল্লা,  ঝন্টু মোল্লা, আফতার হোসেন, মাজেদা খাতুন, বেগম সহ ৪/৫ টি দরিদ্র পরিবার বসবাস করে আসছে। জমিজমার কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে ভূমিহীন পরিবার থেকে সার্ভেয়ারকে দেওয়ার নাম করে হাঁপানিয়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন নামের একজন ১০ হাজার টাকা নিয়ে কোন কাজ করে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন।

সরকারি জায়গায় বসবাস করা বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন বলেন, আমরা ৬০/৭০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। এখন আমাদের উচ্ছেদ করে দিতে চাচ্ছে।  আসলে আমাদের তো কোন জায়গা জমি নেই তাহলে এখন কোথায় যাবো। এখান থেকে উচ্ছেদ না করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

ভুক্তভোগী বকুল প্রামাণিক বলেন, আমাদের নামের সম্পত্তি। যেখানে আমরা ৬০/৭০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছি। বর্তমানে এলাকার কিছু হাইব্রিড বিএনপির লোকজন সেখান থেকে স্বেচ্ছায় সরে যেতে হুমকি দেয়। জমি ছেড়ে না দেওয়ায় পরিবারে এসে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে। এরপর সেদিন বাজার থেকে বাড়ি আসার পথে আমাকে হত্যার জন্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রধান অভিযুক্ত বায়েজিদ হাসান আবেদের মোবাইল কল দেওয়া হলে রিসিভ করেনি। এজন্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

পাবনা সদর উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে সেখানকার খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। লাল প্লাগ দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোন কার্যক্রম হয়নি। তবে ওখানকর ব্যক্তিকালিকানাধীন সম্পত্তি নেওয়ার সুযোগ নেই। যে টুকু খাসজমি ওটাই উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই নিজ নামীয় সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের জন্য তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও মারধর করা হয়েছে বিষয়টি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এটা আমাদের জানা নেই। অবগত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব।

ট্যাগঃ

পাবনা প্রেসক্লাবের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন 

পাবনায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টা করে নিজ জমি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে!

সর্বশেষ আপডেট : ০৭:৩০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

পাবনা সদরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নে নিজ নামের সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জমি ছেড়ে না দেওয়ায় কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি। রোববার (৬ এপ্রিল) রাতে ইউনিয়নের শ্রীকোল বাজারে তাদেরকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় পাবনা কোর্টে সোমবার (১৩ এপ্রিল) একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে আব্দুল ওহাব প্রামাণিক পরিবার।

ভুক্তভোগীরা হলেন- শ্রীকোল গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে  মোঃ বকুল প্রামানিক (৩৫)  ফরিদ প্রামাণিক (২৫)। এদের মধ্যে বকুল প্রামাণিককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন- শ্রীকোল গ্রামের আলতাব প্রামাণিকের ছেলে বায়েজিদ হাসান আবেদ, খয়বার প্রামানিকের ছেলে ওবায়দুল হাসান, কেরু প্রামাণিকের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, আলতাবের ছেলে কোরবান আলী, কাদের মন্ডলের ছেলে নাজমুল হোসেন। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এসব দূর্দান্ত, দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় বাদীকে ভোগ দখলে রাখা জমির বসতবাড়ী হতে বেদখল করার নানা পাঁয়তারা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাদী ও বাদীর ছেলে মোঃ বকুল প্রামাণিক এবং ফরিদ প্রামাণিক গত ৬ এপ্রিল রোববার  সন্ধা ৭ টার দিকে শ্রীকোল বাজারে থেকে বাড়িতে আসার পথে আসামিরা বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, জিআই পাইপ, চাপাতি, লোহার রড, হাতুরী সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।  স্থানীয়রা উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এছাড়াও সেদিন সকালে তাদের বাড়িতে এসে এই চক্রটি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। আনুমানিক ১,২০,০০০/- (এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকার ক্ষতি করে ফিরে যাওয়ার সময় হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, ওই দাগে মোট ৬১ শতাংশ জমি রয়েছে। দাগ নম্বর আরএস দাগ ৩২৩৫। এর মধ্যে ৩১ শতাংশ এক নম্বর খতিয়ানভূক্ত খাসে একই দাগভূক্ত ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মালিকানাধীন এবং দুইটা আলাদা খতিয়ানভূক্ত। মালিকানাধীন সম্পত্তির তিনটি রেকর্ড ডিএস, এসএ, আরএস তিনটা রেকর্ডিই মালিকানাধীন। ৭০ বছরের বসতি। খাজনা পরিশোধ। আর এসে রেকর্ডে শ্রেণিতে বাড়ি উল্লেখ করা আছে। এবং খাস সম্পত্তি ৩১ এর প্রায় ২০/২২ শতাংশের উপর ৫ টি ভূমিহীন পরিবার ৬০/৬৫ বছর ধরে বসবাস করে। তার পিছনে খাসের ১০ শতাংশ জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পুকুর রয়েছে। 

১৯৫৭ সালে চরতারাপুরের খোদাবক্স নামের ব্যক্তির থেকে পশ্চিম দিকে উল্লেখ করে ২৬ শতাংশ জমি কেনেন সকির উদ্দিন ও কফিল উদ্দিন। আর ৪ শতাংশ কেনেন শান্টু দফাদার। বাকি সরকারি সম্পত্তির উপর ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোসলেম শেখ, সবুজ মোল্লা,  ঝন্টু মোল্লা, আফতার হোসেন, মাজেদা খাতুন, বেগম সহ ৪/৫ টি দরিদ্র পরিবার বসবাস করে আসছে। জমিজমার কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে ভূমিহীন পরিবার থেকে সার্ভেয়ারকে দেওয়ার নাম করে হাঁপানিয়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন নামের একজন ১০ হাজার টাকা নিয়ে কোন কাজ করে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন।

সরকারি জায়গায় বসবাস করা বৃদ্ধা মাজেদা খাতুন বলেন, আমরা ৬০/৭০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। এখন আমাদের উচ্ছেদ করে দিতে চাচ্ছে।  আসলে আমাদের তো কোন জায়গা জমি নেই তাহলে এখন কোথায় যাবো। এখান থেকে উচ্ছেদ না করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

ভুক্তভোগী বকুল প্রামাণিক বলেন, আমাদের নামের সম্পত্তি। যেখানে আমরা ৬০/৭০ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছি। বর্তমানে এলাকার কিছু হাইব্রিড বিএনপির লোকজন সেখান থেকে স্বেচ্ছায় সরে যেতে হুমকি দেয়। জমি ছেড়ে না দেওয়ায় পরিবারে এসে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে। এরপর সেদিন বাজার থেকে বাড়ি আসার পথে আমাকে হত্যার জন্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি। এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রধান অভিযুক্ত বায়েজিদ হাসান আবেদের মোবাইল কল দেওয়া হলে রিসিভ করেনি। এজন্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

পাবনা সদর উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে সেখানকার খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। লাল প্লাগ দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোন কার্যক্রম হয়নি। তবে ওখানকর ব্যক্তিকালিকানাধীন সম্পত্তি নেওয়ার সুযোগ নেই। যে টুকু খাসজমি ওটাই উদ্ধার করা হয়েছে।

ওই নিজ নামীয় সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের জন্য তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও মারধর করা হয়েছে বিষয়টি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এটা আমাদের জানা নেই। অবগত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারব।