ঢাকা ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈশ্বরদীতে কারখানার বর্জ্যে কৃষি ও পরিবেশে ক্ষতি

পাবনার ঈশ্বরদীতে বিডি ক্রিয়েশন নামক একটি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে আশপাশের কয়েক গ্রামের পরিবেশ৷ কেমিক্যাল যুক্ত এসব বর্জ্যে তীব্র দুর্গন্ধ থাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কারখানার আশপাশের এলাকা । এসব বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে কৃষিজমিতে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটছে। কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেও বাধা দিতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের কয়েকজন। 

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দাশুড়িয়ার মুনসিদপুর এলাকায় হস্তশিল্প কারখানাটি গড়ে তোলেন পিয়াস হোসেন নামের একজন শিল্পপতি। কারখানা শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাদের ইটিপি প্ল্যান্ট না থাকায়  বর্জ্য শোধনাগার না করে সরাসরি অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার নামে ফেলা হচ্ছে পাশের একটি খালে৷ যে খালের মাধ্যমে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত এই পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে৷ এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এছাড়া কেমিক্যালের দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পাশাপাশি বসবাসেরও অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। এদিকে কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এতদিন মুখ বুজে এই অমানবিক অত্যাচার সহ্য করলেও সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সকলেই।

কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী রুবেল হোসেন নামের একজন জানান, ‘শুরুর থেকেই কারখানাটি নিয়ম কানুন না মেনেই বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ফেলছেন। এতে ড্রেনের পানি সরাসরি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। ফলে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে। বিশ্রী ধরনের দুর্গন্ধের কারণে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।’

শামসুল আলম নামের একজন বলেন, ‘কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। আর অনেকে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নজরে দিলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমানে কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকায় বসবাসরত একাধিক নারী-পুরুষ বলেন, বিডি ক্রিয়েশন ফ্যাক্টরির মালিক অত্যন্ত প্রভাবশালী। কতটা অমানবিক হলে কারখানার দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য আমাদের বসতি এলাকায় ফেলছেন। দিনরাত সব সময় দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে । শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেও কারো কোন ধরনের নজরদারি চোখে পড়েনি। কেমিক্যালের পানি সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ডেনে ফেলছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর ড্রেন থেকে সে পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। এতে পর্যাপ্ত ফসল মিলছে না কৃষি জমি থেকে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সকলেই। 

এসকল বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবী সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনেই কারখানা চালাচ্ছেন তারা। 

এ সকল বিষয়ে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল গফুর জানান, ‘২০১৮ সালে বিডি ক্রিয়েশন কারখানা  পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র পেয়েছেন। তবে এলাকাবাসীর যে অভিযোগ তা সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে সততা মিললে বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অভিযান করা সম্ভব।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘যেহেতু প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়টি আমরা জেনেছি তদন্তে সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ট্যাগঃ
জনপ্রিয়

সাঁথিয়ার মিয়াপুর কলেজের অধ্যক্ষ ও আ.লীগ নেতা মজিবুর এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে

ঈশ্বরদীতে কারখানার বর্জ্যে কৃষি ও পরিবেশে ক্ষতি

সর্বশেষ আপডেট : ০৮:৪৩:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

পাবনার ঈশ্বরদীতে বিডি ক্রিয়েশন নামক একটি কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে আশপাশের কয়েক গ্রামের পরিবেশ৷ কেমিক্যাল যুক্ত এসব বর্জ্যে তীব্র দুর্গন্ধ থাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কারখানার আশপাশের এলাকা । এসব বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে কৃষিজমিতে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটছে। কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেও বাধা দিতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীদের কয়েকজন। 

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দাশুড়িয়ার মুনসিদপুর এলাকায় হস্তশিল্প কারখানাটি গড়ে তোলেন পিয়াস হোসেন নামের একজন শিল্পপতি। কারখানা শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাদের ইটিপি প্ল্যান্ট না থাকায়  বর্জ্য শোধনাগার না করে সরাসরি অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার নামে ফেলা হচ্ছে পাশের একটি খালে৷ যে খালের মাধ্যমে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত এই পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে৷ এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। এছাড়া কেমিক্যালের দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার পাশাপাশি বসবাসেরও অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। এদিকে কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এতদিন মুখ বুজে এই অমানবিক অত্যাচার সহ্য করলেও সম্প্রতি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সকলেই।

কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী রুবেল হোসেন নামের একজন জানান, ‘শুরুর থেকেই কারখানাটি নিয়ম কানুন না মেনেই বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ফেলছেন। এতে ড্রেনের পানি সরাসরি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। ফলে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে। বিশ্রী ধরনের দুর্গন্ধের কারণে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।’

শামসুল আলম নামের একজন বলেন, ‘কারখানা মালিক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। আর অনেকে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নজরে দিলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বর্তমানে কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকায় বসবাসরত একাধিক নারী-পুরুষ বলেন, বিডি ক্রিয়েশন ফ্যাক্টরির মালিক অত্যন্ত প্রভাবশালী। কতটা অমানবিক হলে কারখানার দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য আমাদের বসতি এলাকায় ফেলছেন। দিনরাত সব সময় দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে । শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেও কারো কোন ধরনের নজরদারি চোখে পড়েনি। কেমিক্যালের পানি সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে ডেনে ফেলছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর ড্রেন থেকে সে পানি চলে যাচ্ছে কৃষি জমিতে। এতে পর্যাপ্ত ফসল মিলছে না কৃষি জমি থেকে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সকলেই। 

এসকল বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবী সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনেই কারখানা চালাচ্ছেন তারা। 

এ সকল বিষয়ে পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল গফুর জানান, ‘২০১৮ সালে বিডি ক্রিয়েশন কারখানা  পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র পেয়েছেন। তবে এলাকাবাসীর যে অভিযোগ তা সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে সততা মিললে বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অভিযান করা সম্ভব।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘যেহেতু প্রাথমিকভাবে অভিযোগের বিষয়টি আমরা জেনেছি তদন্তে সত্যতা মিললে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।